লেখক: ইয়াছিন আলী
ধারাবাহিক: ৩য় পর্ব
হরিহর পুত্র আয়াপ্পা
ভারতবর্ষের সাহিত্যের মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে পুরাণ (বিতর্ক এড়াতে আমি সাহিত্য হিসেবে তুলে ধরতেই বেশি আগ্রহী)। এই পুরাণ সমুহের মধ্যে শ্রী ভগবত পুরাণে হিন্দু ধর্মের দুই গুরুত্বপূর্ণ দেবতা হরি (বিষ্ণু) ও হর (শিব) এর সন্তানের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। এই সন্তান শবরীমালা মন্দিরের দেবতা আয়প্পা হিসেবে প্রচলিত। পুরো ঘটনাক্রম সাজাতে গেলে শুধু ভগবত পুরাণ নয় বরং আরও কয়েকটি পুরাণের সহায়তা নিতে হবে।
ব্রহ্ম দেব ও সূর্য দেবের বরে মহিষাসুর অপরাজেয় হয়ে ওঠে। কোন পুরুষ তাকে মারতে পারবে না এই বর লাভ করে ব্রহ্ম দেবের কাছ থেকে এবং তার পিতা সূর্য দেবের কাছ থেকে একটি শক্তিশালী পুত্র লাভের বর লাভ করে। ত্রীলোকে মহিষাসুরের অত্যাচার বৃদ্ধি পেলে দেবী চন্ডি/দূর্গা তাকে বধ করেন। মহিষাসুরের মৃত্যুর পর তার বোন মহিষী ভ্রাতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে ব্রহ্ম দেবের আর্চনা করেন। বৃহ্ম দেবের কাছে অমরত্বের বর চাইলে এই বর দিতে অস্বীকার করেন কিন্তু এই বর দেন যে “দুজন পুরুষের সন্তান ছাড়া কেউ তাকে মারতে পারবে না”। এই বর ছিল অমরত্বের মতোই। তাই মহিষী স্বর্গ দেবতাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়।
এর আগে সমুদ্র মন্থনের সময় অসুরদের কাছ থেকে অমৃত উদ্ধার করতে বিষ্ণু দেব মোহিনী রুপ ধারণ করে অসুরদের বিভ্রান্ত করে দেবতাদের মধ্যে অমৃত ভাগ করে দেন। বিষ্ণুর মোহিনী অবতারে কথা শুনে কৌলাস থেকে শিব ও পার্বতী বৈকুণ্ঠে বিষ্ণুর কাছে যান। মোহিনী রুপ দর্শন করানোর জন্য বিষ্ণু দেবকে অনুরোধ করেন। বিষ্ণুর মোহিনীর রুপ দর্শন করে মহাদেব কামনা অনুভব করেন। যার ফলে শিব ও মোহিনী রুপী বিষ্ণুর মিলনে একটি ছেলে সন্তান উৎপন্ন হয়। এই সন্তানকে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। যার ফলে সেই সন্তান ভাসতে ভাসতে কেরল রাজ্যে এসে পৌছায়। কেরল রাজ্যের রাজা রাজ শেখর এই সন্তান লাভ করেন। রাজা ছিল নিঃসন্তান। তাই এই সন্তানকে নিজের সন্তানের মতো করে লালন পালন করেন। বড় হয়ে এই সন্তান নিজের অস্তিত্ব এবং জন্মের কারণ জানতে পারেন। তারপর মহিষীর সঙ্গে যুদ্ধ করে তাকে পরাজিত করেন। হরি এবং হরের অংশ হওয়ার কারণে রাজা রাজ শেখর শবরীমাল মন্দিরে আয়প্পাকে স্থাপন করেন। কথিত আছে আয়াপ্পা ছিলেন চির ব্রহ্মচারী (চির কুমার)। মালিকাপুরাত্থাম্মা নামে একদেবী আয়াপ্পাকে বিবাহ করতে চাইলে তিনি সেটা অস্বীকৃতি জানান। যার ফলে সেই দেবী আয়াপ্পাকে ভালবেসে চির অপেক্ষায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেন এবং শবরীমালা মন্দিরের অদূরে মালিকাপুরাত্থাম্মা নামে একটি মন্দিরে তিনি পূজিত হন। আয়াপ্পা বাবর নামে এক মুসলিম যুবকের সাথে গভীর বন্ধুত্বে জড়িয়ে পড়ে। আয়াপ্পা বন্ধুকে ভালোবেসে নিজ মন্দিরের পাশে বন্ধু বাবরের দর্গা স্থাপন করতে বলেন । চারদিকে সাম্প্রদায়িকতার দূষিত বায়ু ছড়িয়ে গেলেও পাশাপাশি দুটি বৃহৎ ধর্ম পালিত হয়ে আসছে এখানে। কিন্তু ব্রহ্মচারী ব্রত যেন ভঙ্গ না হয় এজন্য ১০ থেকে ৫০ বছরের কোন নারী এই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন না। ভারতীয় হাইকোর্ট এই নিষেধাজ্ঞা তুলে দিলেও নিজেদের বিশ্বাসের কারণে মন্দিরে প্রবেশ করেন না এই বয়সের কোন নারী।
প্রাচীন ভারতবর্ষীয় সংস্কৃতি ও সাহিত্যে যৌন বৈচিত্র সম্প্রদায়ের কাহিনী: ২য় পর্ব
প্রাচীন ভারতবর্ষীয় সংস্কৃতি ও সাহিত্যে যৌন বৈচিত্র সম্প্রদায়ের কাহিনী: ১ম পর্ব